RECENT POST

প্রবন্ধ রচনা




নিরক্ষরতা দূরীকরণ /নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা


(সংকেত: ভূমিকা, নিরক্ষরতা এক চূড়ান্ত পরাজয়, উন্নত দেশের উদাহরণ, নিরক্ষরতার কারণ, প্রতিকারের উপায়, বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ, বয়স্কদের শিক্ষা, গণশিক্ষা কেন্দ্র, বাংলা ভাষা সহজীকরণ, ছাত্র সমাজের ভূমিকা, উপসংহার)
ভূমিকা
অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষই নিরক্ষর। আর মানুষের এই অক্ষর জ্ঞানের অভাবকেই বলা হয় নিরক্ষরতা। বাংলাদেশে নিরক্ষরতার পরিমাণ শতকরা ৪০ জন। নিরক্ষরতা জীবনের সবচেয়ে বড় অসহায়ত্ব। নিরক্ষর মানুষ চোখ থাকতেও অন্ধ। তারা জ্ঞানের জগৎ ও আলোর দুনিয়া থেকে প্রায় বঞ্চিত। নিরক্ষর মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন-শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদির স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না। তাদের জীবনটাই একরকম ব্যর্থ। জীবন ও জগতের কিছুই তারা বুঝতে পারে না। যেমন পারে না অপরের চিন্তাধারাকে উপলব্ধি করতে, তেমনি পারে না নিজের ভাবনা-চিন্তাকে প্রকাশ করতে। কুয়ার ব্যাঙের মতো তাদের জীবন কাটে সংকীর্ণ গণ্ডীর অন্ধকারে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, নিজের ভালো-মন্দও বুঝতে অন্যের সহায়তার প্রয়োজন হয়।
নিরক্ষরতা এক চূড়ান্ত পরাজয়
আমাদের দেশের শতকরা ৪০ জন নিরক্ষর। বাকি চল্লিশ জনের মধ্যে ১৭/১৮ জনকে প্রকৃত শিক্ষিত বলা যায়। অন্যরা কোন রকমে পড়তে পারে, লিখতে পারে, নাম দস্তখত করতে পারে। একটা স্বাধীন দেশের এতগুলো লোক নিরক্ষর থাকা জাতির পক্ষে ক্ষতিকর এবং লজ্জাকর। বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও সভ্যতার যুগ। এ যুগেও আমাদের অধিকাংশ জনগণ যদি নিরক্ষর থাকে, তাহলে জাতির উন্নতি কোনোভাবে আশা করা যায় না। আমাদের দেশের জনসাধারণ অশিক্ষিত বলে রক্ষণশীল, কুসংস্কার ও গোঁড়ামিতে আবদ্ধ। অজ্ঞতা আমাদের মনকে সংকীর্ণ করে ফেলেছে। তারা উন্নত চিন্তা-ভাবনা করতে পারে না। দেশের উন্নতি হওয়া তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। তাই নিরক্ষরতাই আমাদের দেশের উন্নয়নের মূল বাধা। নিরক্ষরতার কারণে জাতীয় পর্যায়ের প্রায় সকল উদ্যোগে আমাদের পরাজয় অপেক্ষা করে।
উন্নত দেশের উদাহরণ
কোনো উন্নত দেশই নিরক্ষরতা দূরীকরণে অমনোযোগী ছিল না। পরাধীনতা বা স্বৈরাচারী শাসন হতে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলোও নিরক্ষরতার সমস্যা সমাধানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধনা করে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, তুরস্কে বিশ বছরের মধ্যে শিক্ষার মান শতকরা ষাট ভাগ বৃদ্ধি পায়। অথচ এই তুরস্ককে এক সময় রুগ্ন দেশ বলা হত।
নিরক্ষরতার কারণ
দারিদ্র্যতাই আমাদের নিরক্ষরতার প্রথম ও প্রধান কারণ। আমাদের দেশের জনগণ এত দরিদ্র যে, দুবেলা দুমুঠো ভাতের যোগাড় করাই তাদের পক্ষে কঠিন। এজন্য তাদের ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষার দু/এক ধাপ পৌঁছেই স্কুল থেকে বিদায় নেয়। তাছাড়া ব্রিটিশ এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের শাসন ও শোষণ আমাদের অজ্ঞতার অন্যতম কারণ। ঔপনিবেশিক শাসন এদেশের মানুষকে অন্ধ রেখে তাদের ওপর শোষণ করার সুযোগ গ্রহণ করেছিল। ব্যক্তিগত চেষ্টায় সেসময়ে দু/একজন সামান্য লেখাপড়া শিখতে পারলেও অধিকাংশ মানুষ পড়ে ছিল অজ্ঞতার অন্ধকারে। এখনো এ ধরনের মানসিকতা আমাদের মধ্যে কাজ করছে। এছাড়া কুসংস্কার, রক্ষণশীলতা ও গোঁড়ামির জন্য এদেশের মানুষ শিক্ষার প্রতি খুব একটা আগ্রহী নয়।
প্রতিকারের উপায়
বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন শিক্ষার। আমাদের দেশ বর্তমান সভ্য দুনিয়ার একেবারে শেষপ্রান্তে আছে। এর কারণ নিরক্ষরতা। আমাদের সমাজ জীবনে মামলা-মোকদ্দমা, জালিয়াতি-জুয়াচুরি,অন্যায়-অপরাধ ও নীতিহীন যত অপকর্ম, তার মূলে রয়েছে এ নিরক্ষরতা। নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে এদেশের মানুষকে আলোতে আনতে হবে।
 সরকারের পদক্ষেপ
আমরা পরাধীনতার শিকল ছিড়ে স্বাধীনতা লাভ করেছি। এখন দেশকে শিক্ষিত ও শক্তিশালী করতে হবে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে এবং এই শিক্ষাকে উৎসাহ প্রদানের জন্য শিক্ষার বদলে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে দেশে বিপুল সাড়া পড়েছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে ছাত্রসংখ্যা বহুগুণে বেড়ে গেছে। এছাড়াও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে এবং তাদের বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বয়স্কদের শিক্ষা
প্রাইমারি শিক্ষার জন্য যেমন সরকার দৃষ্টি দিয়েছে, সেরূপ বয়স্কদের শিক্ষার জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন। প্রাইমারি শিক্ষার ফল আস্তে আস্তে পাওয়া যায়, কিন্তু বয়স্কদের শিক্ষার ফল সাথে সাথে পাওয়া যায়। স্বাধীন দেশের বয়স্ক নাগরিক অশিক্ষিত অবস্থায় থাকতে চায় না। বিদেশে এমন কি অন্ধ, বোবা ও বধিরদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার সুযোগ দান করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। জীবিকা অর্জন অথবা তার প্রয়াসের দরুন বয়স্কদের পক্ষে লেখাপড়ায় বেশি সময় দেওয়া সম্ভব নয়। অবশ্য মাতৃভাষার সাহায্যে সামান্য উদ্যমেই কার্যকর জ্ঞান অর্জন করা তাদের পক্ষে সম্ভব। এতে আমাদের বহির্জগতের সাথে পরিচয়, সাধারণ জ্ঞান এবং ভাষা জ্ঞান শিক্ষার জন্য বিশেষ সুযোগ দান করে। তাই বয়স্কদের শিক্ষাদানের উদ্যোগ আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
গণশিক্ষা কেন্দ্র
বর্তমানে বহু স্থানে স্থানীয় শিক্ষিত তরুণদের উৎসাহ উদ্দীপনায় গণশিক্ষা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের পরিচালকগণ আন্তরিক হলে নিরক্ষরতা দূরীকরণে বেশি সময়ের প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে একটি নৈশ বিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত করে অবসরকালীন কার্যক্রমের মাধ্যমে পালাক্রমে স্কুলত্যাগী, শ্রমজীবী কিশোর-কিশোরী ও অশিক্ষিত বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থা সহজেই করা যেতে পারে। এতে স্কুল বা কলেজের একজন শিক্ষক সপ্তাহে একটি করে ক্লাসও ভাগে পাবেন কিনা সন্দেহ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানগণ ও শিক্ষকবৃন্দ প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
বাংলা ভাষা সহজীকরণ
বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ সহজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক নিয়োজিত ভাষা কমিটি বাংলা ভাষা সহজ এবং সুদূরপ্রসারী করতে সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করেছেন। সুপারিশ অনুযায়ী যে ‘সহজ বাংলা শিক্ষা’ পদ্ধতি প্রচলন করা হয়েছে, তার সাহায্যে বাঙালি যেকোনো ব্যক্তি অল্প সময়ে বাংলা শিখতে পারবে। এ সহজ বাংলা শিক্ষা পদ্ধতি বয়স্কদের শিক্ষার কাজকে সহজতর করেছে। সহজ বাংলা শিক্ষা পদ্ধতির বহু কেন্দ্রে বহু বয়স্ক নরনারী শিক্ষালাভ করে।
ছাত্র সমাজের ভূমিকা
নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রদের দায়িত্ব অপরিসীম। স্কুল-কলেজের ছাত্ররা যদি ছুটির দিনে নিরক্ষর মানুষের পাশে এসে অক্ষরজ্ঞান দান করে এবং শিক্ষার গুরত্ব সম্পর্কে তাদের আগ্রহী ও সচেতন করে তোলে, তাহলে সবচেয়ে বেশি সুফল পেতে পারে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ছাত্ররা এ দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশের শিক্ষিত লোক ও সমাজ কর্মীদের চেষ্টায় নিরক্ষরতা দূর হতে পারে। তারা যদি গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে পল্লির অশিক্ষিত নরনারীকে তাদের অজ্ঞতার পরিণাম, কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও রক্ষণশীলতার ফলাফল সম্পর্কে ভালো করে বোঝান, তাহলে জনমনে সাড়া জাগবে।
উপসংহার
নিরক্ষরতা আমাদের জাতীয় জীবনে একটি দুরারোগ্য ব্যাধি, দেশ ও জাতির চরম শত্রু। এ শত্রুকে ধ্বংস করতে না পারলে জাতীয় উন্নতি আসবে না। সরকারি উদ্যোগ ও দেশপ্রেমিক জাগ্রত জনগণের প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান সম্ভব।  মনে রাখতে হবে শুধু নিজে শিক্ষিত হলে চলবে না। কেননা, শরীরের সমস্ত রক্ত মুখে জমা হওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে গুটিকতক লোক শিক্ষিত হলে তাকে শিক্ষিত জাতি বলা যাবে না। তাতে দেশের উন্নতিও আসবে না। তাই দেশের নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দান করে নিরক্ষরতার অভিশাপ মুক্ত করতে সংগ্রাম করে যেতে হবে।


বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ


(সংকেত: ভূমিকা; বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা; সভ্যতায় বিজ্ঞানের ছোঁয়া; যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে; চিকিৎসা ক্ষেত্রে; কৃষি ক্ষেত্রে, অন্যান্য ক্ষেত্র ও বিস্ময়; বিজ্ঞানের অভিশাপ; অভিশাপ হওয়ার কারণ; অভিশাপ থেকে উত্তরণ/মুক্তির উপায়; উপসংহার।)
ভূমিকা: আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। আজকের সভ্যতার এই বিশাল ইমারত মানুষের যুগ যুগান্তরের স্বপ্ন ও সাধনার ফসল। মানুষ সভ্যতার বেদীমূলে দিয়েছে মস্তিষ্কের বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং হৃদয়ের ভালোবাসা। বিজ্ঞান সে সভ্যতাকে করেছে গতিশীল ও অগ্রসর। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে গতি, করেছে দূর্জেয় শক্তির অধিকারী। বিজ্ঞানের বলেই আদিম বন্যচারী মানুষ সভ্যতার আলো পেয়েছে। সুদৃঢ় সমুদ্রতল থেকে মহাকাশ যাত্রা আজ তার ইচ্ছার অধীন হয়েছে। তবে বিজ্ঞান যে শুধু সভ্যতার কল্যাণ করছে তা নয়। বিজ্ঞান আজ মানুষের অকল্যাণেও ব্যবহৃত হচ্ছে। যার উপর ভর করে মানব সভ্যতা অগ্রসর হয়েছিল সেই বিজ্ঞানই আজ সভ্যতার বিনাশে মাতাল হয়ে উঠেছে। এ কারণে বিজ্ঞান আজ অনেক ক্ষেত্রেই মানব জীবনের আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা: মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই তার চারপাশের জগৎ সম্পর্কে কৌতুহলী ছিল। এই কৌতুহল থেকে বিজ্ঞান আবিষ্কার। গুহাবাসী মানুষ যেদিন থেকে আগুনের আবিষ্কার করেছিল সেদিন থেকে বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর পর ক্রমে ক্রমে মানুষ আবিষ্কার করেছিল সভ্যতা। বিজ্ঞানের ছোঁয়া লেগে সেই আদিম সভ্যতা আজ যন্ত্রসভ্যতার রূপ নিয়েছে। সেই আদিম মানুষের হাতে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল আজ পর্যন্ত তা থামেনি। মানুষ আজ শুধু নিজেকে রক্ষা করার জন্য নয় বরং জীবনের সবক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে প্রয়াসী হয়েছে।
সভ্যতায় বিজ্ঞানের ছোঁয়া/ আশীর্বাদ: বিজ্ঞান মানুষ ও সভ্যতাকে শতভাগ এগিয়ে নিয়েছে। চলার প্রয়োজনে মানুষ আবিষ্কার করেছে নানা গাড়ি, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ওষুধ, যোগাযোগের প্রয়োজনে নানা প্রযুক্তি। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনেও মানুষ আজ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আজ প্রকৃতিকেও বশ মানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিজ্ঞান সভ্যতাকে করেছে আলোকজ্জ্বল, মানুষের জ্ঞান ও দৃষ্টিকে করেছে সুদূরপ্রসারী।
যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে: সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের যান ছিল দু পা। কিন্তু দূর-দূরান্তরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ পায়ের উপর ভর করা চলে না। তাই মানুষ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দূর দূরান্তকে জয় করার প্রয়াস পেল। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আবিষ্কার করেছে দ্রুতগামী যান- ট্রেন, জাহাজ, উড়োজাহাজ, বিমান ইত্যাদি। মহাশূন্যের অজানা জ্ঞানকে জানার জন্য আবিষ্কার করেছে রকেট, মহাকাশ যান। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তের খবর নেওয়ার জন্য আবিষ্কার করেছে ফ্যাক্স, টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ই-মেইল, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন। এভাবে যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির আবিষ্কার ও ব্যবহার সারা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে: পূর্বে মানুষ রোগমুক্তির জন্য নানা লতাপাতা ও কুসংস্কারের আশ্রয় নিত। বর্তমানকালে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এক যুগান্তকারী বিপ্লবের সূচনা করেছে। যার ফলে মানুষ দূরারোগ্য ব্যাধিকে জয় করতে পেরেছে। এক্সরে, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, টেরামাইসিন ইত্যাদি জীবনকে দীর্ঘায়ু করেছে। জিন প্রতিস্থাপন, কর্ণিয়া, বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, হৃদপি-, ফুসফুস এবং যকৃতের মতো অঙ্গ মানুষ প্রতিস্থাপন করছে। আলট্রাসোনোগ্রাম, লেজাররশ্মি ও কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মানুষকে অসাধ্য সাধন করেছে।
কৃষিক্ষেত্রে: সভ্যতার প্রথম আবিষ্কার লাঙ্গলের সময় থেকেই কৃষিকাজে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আজ বিজ্ঞানের বলে মানুষ কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নতি করেছে। আবিষ্কার করেছে ট্রাক্টর, সেচপাম্প, নানা কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি। বর্তমানে জিন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত জাতের বীজ তৈরি হচ্ছে। যা খাদ্য উৎপাদনকে শতভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আজ ধূসর মরুভূমিতেও ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারে মানুষ নিজের শ্রমলাঘব করেছে। সৃষ্টি করেছে শতভাগ খাদ্য নিরাপত্তা।
অন্যান্য ক্ষেত্র ও বিস্ময়: বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যবস্থাকে করেছে আধুনিক ও উন্নত। বর্তমানে রেডিও এবং টেলিভিশন ছাড়াও ইন্টারনেট ও কম্পিউটার প্রযুক্তি শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ঘরে বসেই আজ যেকোনো তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। আবহাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহারে মানুষ প্রকৃতির রোষানল থেকে মুক্তি পেয়েছে। বিজ্ঞান আজ প্রতি মুহূর্তে আমাদের একান্ত সঙ্গী। বিজ্ঞানের বলে মানুষ দুঃখ ও প্রকৃতিকে জয় করেছে। রোবটের আবিষ্কার আজ মানুষের সময় ও শ্রম বাঁচিয়ে দিচ্ছে। টাবলেট কম্পিউটার, ট্যাব, থ্রিজি, ফোর জি ইত্যাদি প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে বিনোদনে ও বিস্ময়ে ভরিয়ে তুলেছে।
বিজ্ঞানের অভিশাপ: মানব সভ্যতার দ্রুত অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মানব জীবনকে সহজ, সরল ও বিনোদনপূর্ণ করে তুলেছে। তবে বিজ্ঞান শুধু উপকার করছে না, তৈরি করেছে নানা সঙ্কট ও আশঙ্কারও। বিজ্ঞানের বলে মানুষ বেকারে পরিণত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিভিন্ন তেজষ্ক্রিয় পদার্থ মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। পৃথিবীর ওজন স্তরকে নষ্ট করছে। ফলে পৃথিবীর উত্তাপ বেড়ে যাচ্ছে, মেরু অঞ্চলে বরফ গলা শুরু করেছে। এছাড়াও বর্তমানে পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া যুদ্ধ-বিগ্রহগুলো তার স্পষ্ট প্রমাণ। দেশে দেশে আজ বৈজ্ঞানিক মরণাস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষার মহড়া চলছে। ফলে মানব সভ্যতাই আজ ধ্বংস ও হুমকির মুখে পড়েছে। তাই বিজ্ঞান আজ আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপের কারণ হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞান অভিশাপ হওয়ার কারণ: বিজ্ঞানের দ্বারা উদ্ভাবিত মরণাস্ত্রের ব্যবহার মানুষকে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয়াকুল করে তুলেছে। তীর ধনুকের পরিবর্তে মানুষ আজ উদ্ভাবন করেছে ট্যাংক, কামান, মর্টার এবং অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়াও আবিষ্কার করেছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, পরমাণু বোমা, জীবানু বোমা, হাইড্রোজেন বোমা ইত্যাদি। যা মুহূর্তে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকির ভয়াবহ ধ্বংসলীলা স্বার্থান্বেষী ক্ষমতালোভী মানুষের হৃদয়কে কোমল করতে পারেনি। আজও রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে আধিপত্য ও শক্তি প্রদর্শনের জন্যে বিজ্ঞানকে কে কত ভয়ংকর ঘাতক করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। ভীয়েতনাম, ইরান, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে অগণিত নিরীহ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আজ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত মানুষ শুনছে নক্ষত্রযুদ্ধের কথা, যা আরো ভয়াবহ। ফলে দেখা যাচ্ছে যে সভ্যতার গায়ে বিজ্ঞান বাসা বেঁধেছে, তারই বিনষ্টে আজ সে মেতে উঠেছে। অবশ্য এর জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়; আধিপত্য শক্তি প্রদর্শনকারী, স্বার্থান্বেষী, বর্বর মানুষরাই এর জন্য দায়ী।
অভিশাপ থেকে উত্তরণের/মুক্তির উপায়: বিজ্ঞান এক অফুরন্ত শক্তি ও সম্ভাবনার উৎস। যা মানুষের উপকার ও অপকারে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। বিজ্ঞানের অনাবিষ্কৃত ক্ষেত্র আমাদের জীবনকে দিতে পারে নতুন কোনো সম্ভাবনার আভাস। তাই বিজ্ঞানের শক্তিকে অনাকাক্সিক্ষত খাতে প্রয়োগ থেকে সরে আসতে হবে। বিজ্ঞানের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিৎ করতে হবে। বিজ্ঞানের কারণে সৃষ্টি হওয়া যাবতীয় সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। সর্বোপরি গোটা পৃথিবীতে এক সারিতে দাড়াতে হবে যাতে বিজ্ঞানের কোনো ধ্বংসাত্মক ব্যবহার না হয়। শক্তিশালী দেশগুলোর মজুতকৃত যাবতীয় ধ্বংসাত্মক অস্ত্র বিনষ্ট করতে হবে। তাহলেই বিজ্ঞান অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদে পরিণত হবে। বিজ্ঞানের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে মানব সভ্যতা।
উপসংহার: বিজ্ঞান অবশ্যই মানব সভ্যতার জন্য কল্যাণময়ী। কতগুলো স্বার্থান্বেষী নরপিশাচ মানুষই বিজ্ঞানকে মানুষের অকল্যাণে নিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানকে আশীর্বাদ থেকে অভিশাপে পরিণত করেছে। বিজ্ঞান যেন এ যুগের তিলোত্তমা যার হাতে আছে অমৃতভান্ডার কিন্তু তার নয়ন কটাক্ষে প্রলয়। তাই মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের সার্থক ও ইতিবাচক প্রয়োগ ঘটাতে হবে। বিজ্ঞানের অপব্যবহার রোধে সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করলেই মানব সভ্যতার অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।


পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার


(সংকেত: ভূমিকা; পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কী; পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণ; পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কারণ; পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া; পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন; পরিবেশ দূষণের প্রতিক্রিয়া; প্রতিরোধে করণীয়; বিশ্বব্যাপী গৃহীত পদক্ষেপ; বাংলাদেশে গৃহীত পদক্ষেপ; উপসংহার।)
ভূমিকা: সৃষ্টির আদিলগ্নে মানুষ ছিল একান্তভাবে পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। মানুষ ও পরিবেশ তখন একই সূত্রে গাঁথা ছিল। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে পরিবেশ ও মানুষের মধ্যকার মৈত্রী সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে। যেদিন মানুষ নিজেদের রুচি অনুসারে পরিবেশ গড়ে তুলতে চায় সেদিন থেকেই দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। জীবনের তাগিদে, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করেছে।
পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কী: ইংরেজি Environment এর বাংলা প্রতিশব্দ পরিবেশ। এটি এসেছে ফরাসি শব্দ Environment থেকে যার অর্থ বেষ্টন করা বা ঘেরা। সাধারণভাবে বলতে গেলে আমাদের চারপাশের ঘরবাড়ি, গাছপালা, দালানকোঠা, নদ-নদী, খাল-বিল, মাটি, বায়ু, পানি ইত্যাদি সব কিছু মিলেই তৈরি হয় পরিবেশ। কিন্তু ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ ও অনূজীবের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককেই পরিবেশ বলে। এস.সি কেন্ডেইগ-এর মতে- ‘পরিবেশ বলতে জৈবিক ও অজৈবিক বস্তুর যোগফল যা কোনো সৃষ্টির পরিবর্তনে সাহায্য করে তাকে বুঝি।’ কোনো কারণে যদি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের কাক্সিক্ষত মাত্রা বিনষ্ট হয় বা পরিবেশ জীব জগতের জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে, তবে সেই অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে পরিবেশ দূষণ বলে।
পরিবেশ দূষণের প্রাকৃতিক কারণ: পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব প্রাকৃতিক কারণ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী তার মধ্যে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি অন্যতম। এই বিপর্যয়ের ফলে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, ঘরবাড়ি ইত্যাদির ব্যাপক ধ্বংসলীলা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। এতে পরিবেশে মারাত্মক দূষণের সৃষ্টি হয়। ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোতে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে ব্যাপক সম্পদ ও প্রাণহানি ঘটে। বাংলাদেশ, চীন, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ঘূর্ণিঝড়ে, জাপান ও ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে অগ্নুৎপাতে এবং জাপান, ভারত, ইরানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের কারণে পরিবেশ ব্যাপকভাবে দূষিত হয়।
পরিবেশ দূষণের মানবসৃষ্ট কারণ: পরিবেশ দূষণের জন্য মানুষসৃষ্ট কারণগুলোই সবচেয়ে বেশি দায়ী। কারণগুলো হলো-
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ: জনসংখ্যা বিস্ফোরণ পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। একটি জরিপে দেখা গেছে ১৮০০ খ্রীস্টাব্দে যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি, সেখানে ২০১২ সালে তা প্রায় ৭০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এই চাপে পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।
শিল্প বিপ্লব: অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শিল্পের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সময়ের সাথে সাথে তার প্রসার ঘটেছে। এই শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যাপকহারে বনজ ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। শিল্প কারখানার নির্গত ধোয়া ও বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করছে।
বনভূমি ধ্বংস: বর্তমানে পরিবেশ দূষণের বড় কারণ বনজ সম্পদের ধ্বংস। একটি সুস্থ পরিবেশের জন্য যেখানে মোট ভূখন্ডের ২৫% বনভূমি থাকার দরকার তা পৃথিবীর বহু দেশে নেই। ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদা মেটাতে, ঘরবাড়ি, আসবাপপত্র ও শিল্প কারখানা প্রভৃতির জন্য ব্যাপক পরিমাণে বৃক্ষনিধন চলছে। এক জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে বিশ্বে বার্ষিক বন ধ্বংসের পরিমাণ ২ কোটি হেক্টর। বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষা মতে- পৃথিবীতে বছরে যে পরিমাণে বন ধ্বংস হচ্ছে তার পরিমাণ প্রতি দশ বছরে ভারতের মোট ভূখন্ডের সমান। উপগ্রহের চিত্রের সাহায্যে দেখা গেছে আফ্রিকার ৫৩% এবং এশিয়ায় ৩৫% এলাকায় কোনো না কোনো মাত্রায় মরুময়তা বিরাজ করে। পৃথিবীতে বনজ সম্পদ ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের অনেক অঞ্চলই মরুভূমিতে পরিণত হবে।
যুদ্ধ ও দুর্ঘটনা: যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত পারমাণবিক অস্ত্র, বোমা ও মরণাস্ত্রের ব্যবহার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৯৪৫ সালে জাপানের আনবিক বোমার বিস্ফোরণ, পরবর্তীতে রাশিয়ার চেরোনবিল দূর্ঘটনা, ভারতের ভূপালে গ্যাস দুর্ঘটনা, ২০০৩-০৪ সালে ইরাকে মরণাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার ঐ সকল এলাকার পরিবেশকে ভয়াবহভাবে দূষিত করে তুলেছে।
পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া: প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণগুলোর জন্যই মাটি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই দূষণের ফলেই পরিবেশ হয়ে উঠছে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী। বাতাসে অতিমাত্রায় মিশ্রিত ক্ষতিকর গ্যাস এবং বিভিন্ন কলকারখানা, মোটরযান ও জ্বালানির ধোঁয়া থেকে প্রতিনিয়ত বায়ু দূষিত হচ্ছে। রাসায়নিক সার, বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় আবর্জনা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে তেমনি মাটি দূষিত হচ্ছে। বিভিন্ন জৈব ও অজৈব, রাসায়নিক পদার্থ ও জীবানু দ্বারা দূষিত হচ্ছে পানি। এছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রের জোরালো শব্দের জন্য ঘটছে শব্দ দূষণ।
পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন: বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের হার বেড়েই চলছে। তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে জলবায়ুর ওপর। যার ফলে জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বায়ুম-লে কার্বন-ডাই-অক্সাইট, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর তাপমাত্রা ব্যাপকহারে বাড়ছে যা গ্রিন হাউজ ইফেক্ট নামে পরিচিত। জার্মান ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘পস্টজাম ইনস্টিটিউট ফল ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ’ এর দেয়া তথ্য মতে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৯০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৪০ বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রিন হাউজ ইফেক্টের কারণে সমুদ্রের পানি ২০ থেকে ১৪০ সে.মি বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার অনেক দেশই পানিতে ডুবে যাবে। মানবজাতির জন্য এটি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
পরিবেশ দূষণের প্রতিক্রিয়া: পরিবেশ দূষণের বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনজীবনের উপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ যার শতকরা ৭০ ভাগ পানি দূষণের ফলে হয়ে থাকে। এছাড়া বায়ু দূষণের ফলে সৃষ্ট শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত কারণে ঘটা মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখের মতো। অন্যদিকে জাতিসংঘ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে পরিবেশ দূষণের ফলে এশিয়ার আকাশে তিন কিলোমিটার পুরু ধোঁয়াশা জমেছে। যা এসিড বৃষ্টি ঘটাতে পারে। এটি এশিয়ার কোটি কোটি মানুষের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া প্রাকৃতিক দূষণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হেপাটাইটিস বি, সংক্রামণ সেরিব্রাল, পোলিও, কলেরা ইত্যাদি রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সাথে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কারণে চামড়ার ক্যান্সার ও চোখের ছানি পড়া রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি খাদ্যশষ্যে তেজস্ক্রিয়াও বেড়ে যেতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়: পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। যন্ত্র ও গাড়ি থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস রোধ করতে হবে। এর বিকল্প স্বরূপ প্রাকৃতিক গ্যাস ও সৌরশক্তি নির্ভর যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী গৃহীত পদক্ষেপ: পরিবেশ দূষণের মারাত্মক প্রতিফলন দেখে বিশ্ববাসী আজ উদ্বিগ্ন। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিভিন্ন সম্মেলন। ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে জাতিসংঘের মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবস পালিত হয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ ও ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিওতে, ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে,  ২০০৯ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সম্মেলন যাতে পরিবেশ সংরক্ষণে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশে গৃহীত পদক্ষেপ: পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারত এগিয়ে চলেছে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে।

। পরবর্তীতে সংশোধিত পরিবেশ সংরক্ষণ বিল ও পরিবেশ

সংরক্ষণ আইন পাশ করা হয় । এছাড়া টু-স্টোক যানবাহন নিষিদ্ধ করে এর পরিবর্তে সিএনজি চালিত যানবাহনের ব্যবহার আরম্ভ হয়েছে। এমনকি ২০০২ সাল থেকে সারাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
উপসংহার: আজকের দিনে পরিবেশ দূষণ বিশ্বজগতের জন্য একটি বিরাট হুমকি। পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষের অস্তিত্ব আজ চরম সংকটে। তাই পরিবেশ দূষণরোধে ব্যক্তিগতভাবে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি সমষ্টিগতভাবে তা প্রতিরোধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আগামী দিনের জন্য একটি সুস্থ ও বসবাস উপযোগী দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলাই হোক সকলের অঙ্গীকার।





আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস


(সংকেত: ভূমিকা; মাতৃভাষা কী; মাতৃভাষার গুরুত্ব; মাতৃভাষার মর্যাদার লড়াই; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি; বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে সিয়েরালিওনের স্বীকৃতি; স্মৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ; স্মরণে ও বরণে একুশ; ২১-এর দীক্ষা; উপসংহার।)
ভূমিকাঃ ‘মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতন।’
এ কেবল নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, এ হচ্ছে সর্বকালের মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি, তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটতে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ। মানুষের পরিচয়ের সেরা নির্ণায়ক মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মা ও মাটির মতোই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এই সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব বাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল সেই মাতৃভাষার মর্যাদা।
মাতৃভাষা কীঃ সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাই বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন  ভাষা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটাই হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মায়ের মুখের আঞ্চলিক বুলি মাত্র নয়, মাতৃভাষা হচ্ছে একটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ভাষা। যা তারা স্বতস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করে। মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শত ধারায় প্রবহমান। বাঙালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বাংলা আমাদের অহংকার। কবি অতুল প্রসাদ সেন এর ভাষায়-
                                           ‘মোদের গরব মোদের আশা
                                                     আমরি বাংলা ভাষা।’
মাতৃভাষার গুরুত্বঃ প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- ‘মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা এই তিনটি জিনিস সবার কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।’ মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। মাতৃভাষাই মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে তৃপ্তি ও পরিপূর্ণতা দান করে। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে মাতৃভাষা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম। কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায়-
                                              নানান দেশের নানান ভাষা
                                                        বিনা স্বদেশি ভাষা; পুরে কি আশা।
মাতৃভাষার মর্যাদার লড়াইঃ বাঙালি পরিচয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো গৌরবজ্জ্বল মহিমা যুগে যুগে বহুবার বাঙালি অর্জন করেছে। বিদেশি শাসনের অপচ্ছায়ায় বারবার ম্লান হয়ে গেছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। খ্রিস্টীয় নবম শতকে এর উপর জেঁকে বসেছে সংস্কৃত, ত্রয়োদশ শতক থেকে ফারসি ও আরবি, আঠারো শতক থেকে ইংরেজি ও ফরাসি, অতঃপর এই অশুভ ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে বাংলার উপরে নেমে আসে উর্দুর অপচ্ছায়া। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে দম্ভ করে ঘোষণা দেন 'Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan' তখন প্রতিবাদে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাভাষী লাখো জনতা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী পাকিস্তানি মিলিটারির রাইফেলের গুলিকে উপেক্ষা করে বীর বাঙালি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ঢাকার রাজপথ সেদিন লাল হয়ে যায় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক তরুণের তাজা রক্তে। ভাষার জন্য জীবন দেবার এরকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। এজন্যই বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আরো একটি ঐতিহাসিক গৌরবম-িত ও আনন্দঘন দিন। এই দিনে বাঙালি অর্জন করেছে তার প্রাণের সম্পদ একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা UNESCO প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জাতিসংঘের ১৮৮টি দেশের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আত্মদান বিশ্বমর্যাদা পায় তেমনি পৃথিবীর ছোট-বড়ো প্রত্যেকটি জাতির মাতৃভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শিত হয়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমিঃ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেবার জন্য যারা উদ্যোগ গ্রহণ করেন তারা হলেন; কানাডায় বসবাসরত একটি বহুজাতিক ভাষাপ্রেমী গ্রুপ ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর ভিন্নভিন্ন ভাষাভাষী দশ জন সদস্য। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এই দশ জন সদস্যের মধ্যে বাংলা ভাষাভাষী যে দুইজন ব্যক্তি ছিলেন তাদের নাম দুই অমর ভাষা শহিদেরই নামÑ রফিক ও সালাম। এই গ্রুপটি ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে একুশে ফেব্রুয়ারিকে এই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রাদানের প্রস্তাব করে। জাতিসংঘ থেকে জানানো হয়, বিশেষ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং বাংলা ভাষাভাষী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা সমীচীন। অতঃপর ভাষাপ্রেমিক জনাব রফিকুল ইসলাম এবং জনাব আব্দুস সালাম বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর ঘোষণাপত্রটি ইউনেস্কোর সদর দফতরে পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবের পক্ষে ২৮টি দেশ লিখিত সমর্থন জানায়। ইউনেস্কোর টেকনিক্যাল কমিটি কমিশন-২ এ প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয় ১২ নভেম্বর ১৯৯৯ তারিখে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০০ প্রতিনিধির সমর্থন লাভ করে প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে সিয়েরালিওনের স্বীকৃতিঃ সিয়েরালিওন আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের নাম। গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত এ দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে শান্তি রক্ষায় অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিনা রক্তপাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাফল্যের সাথে সেখানে শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। সেনাবাহিনীর মুখে মুখে বাংলা ভাষা শুনে তারাও মুগ্ধ হয়। তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে তাদের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অন্য কোনো একটি দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বাংলা ভাষা তথা বাঙালির জন্য গর্বের বিষয়।
স্মৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আর এই ঐতিহ্যকে আজও বাঙালি অন্তরে ধারণ করে রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু সংগ্রহশালায় আজও সংরক্ষিত আছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত সেই আমগাছের অবশিষ্ট অংশ, যেখানে গুলি চালানো হয়েছিল ভাষা শহিদদের উপরে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে অতি যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের অনেক মূল্যবান তথ্য ও চিত্র।
স্বরণে ও বরণে একুশঃ ঐতিহ্য ও আচার অনুষ্ঠান পালনে বাঙালির তুলনা মেলা ভার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারিকে বাঙালি অনেক আগ্রহ অনুরাগ আর ভালোবাসার সাথে পালন করে। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” আপামর বাঙালি জনতা এই আত্মার গানটি গেয়ে শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেত হয়ে, পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের প্রতি অপার শ্রদ্ধা নিবেদন করে দিনটি শুরু করে। প্রভাতফেরীর সেই ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে বাঙালি। বাঙালির রঙে রঙে, পোশাক-আশাকে প্রকাশ প্রায় একুশের আমেজ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গান, বাংলা কবিতা, নৃত্য ও আলোচনার অনুষ্ঠান।
২১-এর দীক্ষাঃ শুধু মাত্র উৎসবের মধ্যে একুশকে সীমাবদ্ধ রাখা মোটেই আমাদের কাম্য হতে পারে না। একুশ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে তা আমাদের দীক্ষা হিসেবে নিতে হবে। একুশ হবে আমাদের কর্মচাঞ্চল্যের উদ্দীপনা। ২১-এর সত্যিকার ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলাভাষার বিকাশ ঘটানোর জন্য আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। যে লক্ষ্যে আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্ররা জীবন দিয়ে গেছে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।
উপসংহারঃ                                               ‘একুশ আমার চেতনা
                                                                   একুশ আমার গর্ব’
কেবল বাংলা ভাষাকে নয়, পৃথিবীর সকল ভাষার নিজস্ব মহিমা অক্ষুন্ন রাখার দীপ্ত শপথ নেবার দিন হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি হিসেবে আজ আমাদের সবার অঙ্গীকার সর্বস্তরে বাংলা-ভাষার প্রচার ও প্রসার।



বেগম রোকেয়া


(সংকেত: ভূমিকা; জন্ম ও শৈশব জীবন; শিক্ষাজীবন; জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস; বিবাহিত জীবন; বাংলা ভাষা চর্চায় প্রতিবন্ধকতা; ইংরেজি ভাষার চর্চা; সাহিত্যকর্ম; সাহিত্য ও নারীমুক্তি; সমাজ সংগঠক; অন্তিমযাত্রা; উপসংহার।)
ভূমিকাঃ বাঙালি মুসলিম সমাজের নারীদের অন্ধকারময় পৃথিবীতে আলোকবার্তা হাতে এসেছিলেন বেগম রোকেয়া। তার সকল কর্মের মূলে ছিল নারীমুক্তির স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে গিয়েই তিনি একদিকে কলম তুলে নিয়েছিলেন, অন্যদিকে নারীদের নতুন পথের সন্ধান দেখিয়েছিলেন। এ কারণেই তিনি আজও ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ হিসেবে পরিচিত।
জন্ম ও শৈশবজীবনঃ বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। বেগম রোকেয়ার পারিবারিক নাম রোকেয়া খাতুন। তার পিতার নাম জহিরুদ্দিন মুহম্মদ আবু আলী সাবের এবং মাতার নাম রাহাতুন্নেসা। বেগম রোকেয়া যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তাঁদের জমিদারি অনেকটা পড়ন্ত দশায় ছিল। তবুও তার শৈশব কাটে তৎকালীন মুসলমান জমিদারি রীতি অনুযায়ী কঠোর পর্দা ও অবরোধের মধ্যে। তার নিজের ভাষায় “অবিবাহিত বালিকাদিগকে অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বাড়ির চাকরাণী ব্যতীত অপর কোনো স্ত্রীলোক দেখিতে পায় না।” এমন কঠোর পর্দা প্রথার মধ্যেই বেগম রোকেয়ার বেড়ে ওঠা।
শিক্ষাজীবনঃ বিশ্বের অনেক কৃতী ব্যক্তির মতো বেগম রোকেয়াও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। নিজের প্রবল আগ্রহ ও কিছু মানুষের সহায়তায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বশিক্ষিত। তাইতো সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল চালু করার সময় প্রথমদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। সামসুন্নাহার মাহমুদের ভাষায়- “রোকেয়া যখন প্রথম পাঁচটি ছাত্রী নিয়ে বালিকা স্কুল স্থাপন করেন, তখন তিনি ভেবে পাননি কী করে একজন শিক্ষয়িত্রী একই সঙ্গে পাঁচটি মেয়েকে পড়াতে পারে।” তবে তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি প্রভৃতি ভাষা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তার সাহিত্যে আমরা এর পরিচয় পাই।
জীবনে অনুপ্রেরণার উৎসঃ বেগম রোকেয়া যে মুসলিম সমাজে বেড়ে উঠেছিল সেখানে স্ত্রীশিক্ষা হিসেবে প্রচলিত ছিল ‘টিয়া পাখির মতো কোরান শরীফ’ পাঠ, নামাজ, রোজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান। এছাড়া স্বামী বা নিকট আত্মীয়কে চিঠি লিখতে পারা, দু-একটি উর্দু-ফারসি পুঁথি পুস্তক পড়ার ক্ষমতা, সেলাই, রান্না ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন মেয়েদের বাংলা শিক্ষা ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ। কিন্তু এমন সমাজের মধ্যেও বেগম রোকেয়ার বড় বোন করিমুন্নেসা একটু আধটু বাংলা পড়েছিলেন এবং ছদ্মনামে বেশ কয়েকটা কবিতাও লিখেছিলেন। করিমুন্নেসার বিদ্যানুরাগ বেগম রোকেয়াকে অনুপ্রেরণা যোগায়। এর সাথে বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের প্রচেষ্টায় তিনি শৈশব থেকে কুসংস্কারকে ঘৃণা করতে শেখেন এবং বিদ্যার্জন করেন। বিয়ের পর স্বামী সাখাওয়াত হোসেনও তাকে এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।
বিবাহিত জীবনঃ উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের সময় বেগম রোকেয়ার বয়স ছিল ১৬ এবং সাখাওয়াত হোসেনের ছিল ৩৮ বছর। সাখাওয়াত হোসেন প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাকে বিয়ে করেন। ব্যক্তি হিসেবে সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদারমনা, রুচিশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও কুসংস্কার বিরোধী মানুষ। এছাড়া স্ত্রীশিক্ষার পক্ষপাতীও ছিলেন তিনি। তাইতো তিনি বেগম রোকেয়াকে ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। এমনকি ১৯০৯ সালে মৃত্যুর আগেই মেয়েদের শিক্ষার জন্য দশ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া ছিলেন নিঃসন্তান। তার দু’টি কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তাদের অকাল মৃত্যু হয়।
বাংলা ভাষা চর্চায় প্রতিবন্ধকতাঃ উর্দুর প্রবল প্রতিকূল স্রোতে বাংলা ভাষাকে প্রাণপ্রণে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন বেগম রোকেয়া। তার স্বামী ও অভিভাবকরা সবাই ছিলেন বাংলা ভাষার বিরোধী। কিন্তু এর মাঝেও তিনি বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। এছাড়া স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে বাংলা শেখাবার ব্রতও নিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে তাকে যে নিদারুণ সংগ্রাম করতে হয়েছিল তার বর্ণনা ‘মতিচূর’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডের করিমুন্নেসার নামে উৎসর্গ পত্রে রয়েছে।
ইংরেজি ভাষার চর্চাঃ বেগম রোকেয়া বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ না করলেও ইংরেজি ভাষার ওপর তার যথেষ্ট দখল ছিল। তার লেখা ওলফভট্র, Sultana's Dream-এর প্রমাণ। এছাড়া বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছে দেয়া ইংরেজিতে লেখা চিঠিও এর প্রমাণ বহন করে।
সাহিত্য কর্মঃ আধুনিক জাগরণশীল বাঙালি মুসলিম সমাজে বেগম রোকেয়াই প্রথম উল্লেখযোগ্য লেখিকা। সাহিত্য ক্ষেত্রে তিনি মিসেস আর এস হোসেন নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা পিপাসা। ১৯০১ সালে ‘নবপ্রভা’ পত্রিকায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর বিভিন্ন লেখা নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হত। তার গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচটি। এগুলো হলো- মতিচূর (প্রথম খন্ড), সুলতানার স্বপ্ন, মতিচূর (দ্বিতীয় খন্ড), পদ্মরাগ ও অবরোধবাসিনী। এছাড়া সম্প্রতিকালে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে আরও কিছু রচনা ও চিঠিপত্র পাওয়া গেছে।
সাহিত্য ও নারী মুক্তিঃ                    “সুকঠিন গার্হস্থ্য ব্যাপার
                                                           সুশৃঙ্খলে কে পারে চালাতে
                                                রাজ্যশাসনের রীতিনীতি
                                                           সূক্ষ্মভাবে রয়েছে ইহাতে।”
বেগম রোকেয়া এই কথাটি শুধু মুখেই বলেননি তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। তাইতো নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে নারীর মানবীয় সত্তার প্রতিষ্ঠা কামনা করেছেন। মুসলিম নারী সমাজের কুসংস্কারের জাল ছিন্ন করতে এবং জড়তা দূর করতে তিনি সাহিত্যকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি বলতেন- “না জাগিলে ভারত ললনা, এ ভারত আর জাগিবে না।” তাই তিনি তার লেখার মাধ্যমে নারীর জাগরণের জন্য লড়াই করেছেন। মুক্তিফল গল্পে তাই বলেছেন- “কন্যারা জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত দেশমাতৃকার মুক্তি অসম্ভব।” বেগম রোকেয়ার মতে এই জাগরণের প্রধান শর্ত শিক্ষা। তার ভাষায় “আমরা পুরুষের ন্যায় সাম্যক সুবিধা না পাইয়া পশ্চাতে পড়িয়া আছি।” তিনি বুঝেছিলেন শিক্ষাই হলো স্বনির্ভরতার সোপান। তাই শিক্ষাকে তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য, আর্থিক সমস্যা, সামাজিক বাধা, লোকনিন্দা কোনো কিছুই তাকে এই ব্রত থেকে সরাতে পারেনি। তাইতো স্ত্রী জাতির অবনতি, অর্ধাঙ্গী, সুগৃহিনী, বোরকা, গৃহ, জাগো গো ভগিনী প্রভৃতি প্রবন্ধে তিনি এই শিক্ষার জয়গানই গেয়েছেন, দিয়েছেন নারী মুক্তির দীক্ষা।
সমাজ সংগঠকঃ বেগম রোকেয়া কেবল লেখিকাই নন, নারী জাগরণের অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন। তিনি ১৯০৯ সালে ১ অক্টোবর ভাগলপুরে পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই তিনি একটি আন্দোলনের সৃষ্টি করেন। এই ধারাই শিক্ষার ধারাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে তিনি ১৯১৬ সালে “আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম” নামে একটি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই বিদ্যালয় ও নারী সমিতির কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন।
অন্তিম যাত্রাঃ বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর ৫২ বছর বয়সে আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগের রাতেও এগারোটা পর্যন্ত তিনি “নারীর অধিকার” নামক একটি প্রবন্ধ লেখার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কলকাতার কাছাকাছি চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত সোদপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার স্মরণে প্রথমে কলকাতার আলবার্ট হলে (বর্তমান কফি হাউজ) ও পরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে দুটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই শোকসভায় হিন্দু মুসলমান একই সাথে যোগদান করেছিলেন। সেখানে এক ভাষণে সৈয়দ এমদাদ আলী বলেছিলেন- “তাহার স্মৃতির উপরে আজ বাংলার মুসলমান সমাজ যে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতেছেন, বাংলার কোনো মুসলমান পুরুষের মৃত্যুতে সেরূপ করিয়াছেন বলিয়া জানি না।”
উপসংহারঃ বাঙালি মুসলিম সমাজে নারীমুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাব সত্যিই বিস্ময়কর। কারণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংগ্রাম করেছিলেন নারীমুক্তির লক্ষ্যে, নারীশিক্ষার লক্ষ্যে। বর্তমান নারী সমাজ যে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে তার অনেকটাই বেগম রোকেয়ার অবদান। এ জন্যই ২০০৪ সালের বিবিসি জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় তিনি ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন। তাই আবুল হুসেনের ভাষায় বলা যায়- “তাহার মতো চিন্তাশীল নারী প্রকৃতই নারীজাতি কেনো, সমগ্র  মানবজাতির গৌরবের পাত্রী।”



কম্পিউটার


(সংকেত: ভূমিকা; কম্পিউটার কী; কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস; কম্পিউটার ও তার কর্মপদ্ধতি; কম্পিউটারের ব্যবহার; বাংলাদেশে কম্পিউটারের ব্যবহার; তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার; বেকারত্ব ও কম্পিউটার; কম্পিউটার জনিত নানা সমস্যা; কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা; উপসংহার।)
ভূমিকা: যুগে যুগে বিজ্ঞান মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে অভাবনীয় সব আবিষ্কার। এইসব আবিষ্কার মানুষের জীবনযাত্রাকে ক্রমে সহজ থেকে সহজতর করে তুলেছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং কার্যক্ষমতাসম্পন্ন আবিষ্কার হলো কম্পিউটার। বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত এ যন্ত্রটিকে যন্ত্রমস্তিষ্ক বলাটা অনেকাংশেই সঙ্গত। বহুমুখী ও বিচত্র কর্মদক্ষতার অধিকারী, দ্রুতগতিসম্পন্ন এই যন্ত্রটি সময়ের অপচয় নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি মানুষের কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক। শক্তিশালী এ যন্ত্রটির ব্যবহার অপেক্ষাকৃত সহজ, ফলে এটি অতি দ্রুত মানবজীবনের একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে।
কম্পিউটার কী: আধুনিক কম্পিউটার হলো এমন একটি যন্ত্র যা অসংখ্য তথ্য (Data) গ্রহণ ও ধারণ করতে পারে এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে উপাত্তগুলোকে গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ এবং যুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় কাজে লাগাতে পারে; সেই সাথে প্রোগ্রাম ঠিক করে দিলে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করতে পারে। Computer শব্দটি গ্রিক শব্দ compute থেকে এসেছে। আক্ষরিক অর্থে compute শব্দটির মানে হলো হিসাব বা গণনা করা। সে ক্ষেত্রে computer শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। তবে বর্তমানে কম্পিউটারকে শুধুমাত্র গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। আধুনিক কম্পিউটার একই সাথে তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ, গণনা, বিশ্লেষণসহ সকল ধরণের কাজ করতে পারে।
কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস: আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে অসংখ্য উদ্ভাবনী শক্তি সম্পন্ন মানুষের বহু বছরের নিরলস পরিশ্রম এবং গবেষণা। প্রাচীন মানুষেরা গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে থাকলেও প্রথম গণনাযন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি যন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ফরাসি বিজ্ঞানী “ব্লেইজ প্যাসকেল” (Basic Pascal) ১৬৪২ সালে সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। অনেক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে চার্লস ব্যাবেজ এমন একটি গণনাযন্ত্র আবিষ্কার করেন যেটি কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানুষের সহায়তা ছাড়াই গাণিতিক হিসাব করতে পারে। ব্যাবেজ এই যন্ত্রের নাম দিয়েছিলেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন। এই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি আরও উন্নত ও সার্বজনীন একটি যন্ত্রের ধারণা লাভ করেন। যদিও প্রয়োজনীয় যন্ত্রের অভাবে ব্যাবেজ তার গবেষণালব্ধ ধারণাটিকে বাস্তবে রূপ দিয়ে যেতে পারেননি। তবে তাঁর পরিকল্পিত গণনাযন্ত্রটিই পরবর্তীকালে আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা দিয়েছে। মূলত আধুনিক কম্পিউটারের সূত্রপাত ঘটেছে ১৮৩৩ সালে।
কম্পিউটার ও তার কর্মপদ্ধতি: কম্পিউটার তার কর্মপদ্ধতি পরিচালনা করে মূলত তিনটি অংশের মাধ্যমে। এগুলো হলো- ইনপুট, সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ এবং আউটপুট। ইনপুট অংশের কাজ হলো তথ্য-উপাত্ত (Data) এবং নির্দেশন গ্রহণ করা। স্রেন্টাল প্রসেসিং ইউনিট তথা সিপিইউ হলো কম্পিউটারের মস্তিষ্ক। কেননা এই অংশ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে। মূলত সিপিইউ গৃহীত ডাটার ওপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং ডাটা ও ফলাফল সংরক্ষণ করে। সর্বোপরি, আউটপুট ফলাফল প্রকাশের কাজটি করে। এই তিনটি অংশের নিয়ন্ত্রণকারী কাঠামোটিকে একত্রে বলা হয় হার্ডওয়্যার। মূলত কম্পিউটারের বাহ্যিক সকল যন্ত্রপাতি অর্থাৎ মনিটর, কী বোর্ড, মাউস, হার্ড-ডিস্ক, মাদারবোর্ড, স্ক্যানার, ডিস্ক, প্রিন্টার, স্পিকার প্রভৃতি যন্ত্রসমূহ হার্ডওয়্যার এর অন্তর্গত। অন্যদিকে, যে সমস্ত প্রোগ্রাম সমষ্টি হার্ডওয়্যারকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কার্যক্ষম করে সেগুলোকে বলা হয় সফটওয়্যার। মূলত সমস্যা সমাধান বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে ধারাবাহিকভাবে সাজানো নির্দেশমালাকে একত্রে প্রোগ্রাম বলা হয়। আর হার্ডওয়্যারকে পরিচালনাকারী প্রোগ্রাম সমষ্টিই হলো সফটওয়্যার। কম্পিউটারের বিস্ময়কর কার্যক্ষমতার মূলে রয়েছে এসকল যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের সমষ্টিবদ্ধ সহায়তা।
কম্পিউটারের ব্যবহার: বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের ব্যবহার এত ব্যাপক যে খুব সহজেই একে কম্পিউটারের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। আধুনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের উপস্থিতি লক্ষ করার মতো। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো কাজই নেই যা কম্পিউটার করছে না। কম্পিউটার কোটি কোটি সংখ্যার জটিল হিসাব কয়েক মুহূর্তে সমাধান করছে। ব্যাংক, বীমা, কিংবা বড় বড় কলকারখানা পরিচালনার পরিকল্পনা, নির্দেশনা, আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতির সমস্ত হিসাব-নিকাশ হচ্ছে কম্পিউটারের সহায়তায়। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থায়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এমনকি শিক্ষা ক্ষেত্রেও পাঠ্যবইয়ের সহায়ক তথ্য প্রদান থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ পর্যন্ত যাবতীয় কার্য সম্পাদনে রয়েছে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার। চিকিৎসা ক্ষেত্রে একদিকে কম্পিউটার রোগ নির্ণয় এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা নিরূপণ করছে। অন্যদিকে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও সহায়তা করছে। কম্পিউটার ছবি আঁকছে, পুরনো ছবি সম্পাদনা করছে, মানচিত্র আঁকছে, প্রিন্টিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং বাড়ি-ঘর, গাড়ি, বিমান, ভাস্কর্য প্রভৃতির নকশা তৈরি করছে। বিনোদনের ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের জুড়ি মেলা ভার। ঘরে বসেই ক্রিকেট, ফুটবল, রেসিং, দাবাসহ নানারকম ভিডিও গেমস্ খেলা যায় কম্পিউটারে। যে সমস্ত দুরূহ কাজ মানুষের অসাধ্য, যে সব দুর্গম এলাকায় মানুষ যেতে অক্ষম কম্পিউটার সেখানেও পৌঁছে যাচ্ছে এবং কার্য সমাধা করছে সুনিপুণভাবে। উদাহরণস্বরূপ, কম্পিউটার চালিত ‘স্ক্যানার’ আটলান্টিক মহাসাগরের অতল থেকে খুঁজে এনেছিল বিধ্বস্ত বিমানের অংশ। মুদ্রণ শিল্পেও কম্পিউটার এক এবং অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করছে। কম্পিউটারে ইন্টারনেটের সাহায্যে ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোনো তথ্য জানা সম্ভব। এছাড়া তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। কম্পিউটারের এমন বহুবিধ ব্যবহারের কারণে আধুনিক জীবনের সঙ্গে এর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আধুনিক জীবনের একটি দিনও তাই কম্পিউটার ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। বহুবিধ কার্যক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার মানব সভ্যতাকে দিয়েছে বিপুল কর্মসুবিধা, দুরন্ত গতি এবং সর্বোপরি অযুত সম্ভাবনা।
 কম্পিউটারের ব্যবহার: বর্তমানে দেশে ব্যাপকভাবে কম্পিউটারের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত তরুণ সমাজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচেতন করে তুলতে সরকার উদ্যোগী হয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করার ফলে দিনে দিনে এর ব্যবহার বেড়েই চলছে। বর্তমানে  কম্পিউটার এবং এর সংশ্লিষ্ট ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি।
তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার: তথ্যপ্রযুক্তির সাথে কম্পিউটার নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। বিগত দুই দশকে গোটা বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর সাফল্য পরিলক্ষিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই ঘটেছে বিশ্বায়নের মতো ঘটনা যা গোটা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। মূলত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রকাশের সঙ্গে জড়িত ব্যবস্থাটিই তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ICT নামে পরিচিত। আর এই তথ্য প্রযুক্তি পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় কম্পিউটার, বিশেষত ইন্টারনেট। তথ্য-প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার-এ দুয়ের যুগল সাহচর্যে মানব সভ্যতার আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।
 বেকার সমস্যা সমাধান ও কম্পিউটার: মানব সৃষ্ট এই যন্ত্রটি কখনো কখনো মানুষেরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।, যার মধ্যে বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য। একটি কম্পিউটার মুহূর্তের মধ্যে কয়েকজন মানুষের কাজ করছে। ফলে স্বভাবতই আগে যেখানে চার-পাঁচ জন লোক কাজ করত, কম্পিউটারের কারণে সেখানে একটি লোকই যথেষ্ট। তবে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটার নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করছে। দিন দিন ব্যাপক হারে কম্পিউটারের প্রসার ঘটে চলেছে। এখানে প্রচুর দক্ষ জনবল প্রয়োজন হচ্ছে। অর্থাৎ কম্পিউটারের পরিকল্পনানুযায়ী সঠিক ব্যবহার বেকারত্ব হ্রাস করে মানুষের জন্য নিত্যনতুন কাজের ক্ষেত্রও তৈরি করছে। এতে শিক্ষিত তরুণদের ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে।
কম্পিউটারজনিত বিভিন্ন সমস্যা: সব বিষয়েরই ভালো-মন্দ দুটি দিক আছে। তেমনি আধুনিক মানুষ একদিকে যেমন কম্পিউটারের আশীর্বাদপুষ্ট, অন্যদিকে বিভিন্ন সমস্যায় পীড়িত। কম্পিউটারের সহায়তায় কিছু অপরাধ চক্র অস্ত্র নির্মাণের মাধ্যমে বিশ্বে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। এছাড়া যুদ্ধ-বিগ্রহ, দেশ দখল, সাইবার ক্রাইম প্রভৃতি নিন্দনীয় কাজে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্টারনেট যদিও তরুণ সমাজের সামনে উন্মুক্ত করেছে জ্ঞানের অবারিত প্রান্তর তবুও নানারকম কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল সংস্কৃতির প্রচার যুবসমাজকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের পথে। ভিডিও গেমসহ নানারকম খেলা অনেক সময় মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে ফেলে। কম্পিউটার থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বেশিক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার চোখের জন্য ক্ষতিকর।
কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: আধুনিক সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে কম্পিউটার শিক্ষা অপরিহার্য। কম্পিউটারের সঠিক এবং ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে কম্পিউটার সম্পর্কিত জ্ঞান অপরিহার্য। মানুষ যতবেশি কম্পিউটার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করবে, কম্পিউটারের অপব্যবহার ততো কমে আসবে। আর কম্পিউটারের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই দেশ ও জাতির অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।
উপসংহার: আধুনিক বিজ্ঞানের এই যুগে কম্পিউটারকে বাদ দিয়ে চলা অসম্ভব। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কম্পিউটার ব্যবহার আজ অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে বিবেচনা করেই কম্পিউটারের প্রয়োগ ক্ষেত্র নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কম্পিউটারের পরিকল্পিত ব্যবহার পারে আধুনিক সভ্যতা ও উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে।





প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান
(সংকেত: ভূমিকা; বিজ্ঞানের অবদান; দৈনন্দিন জীবন ও বিজ্ঞান; গৃহস্থলি কাজে বিজ্ঞান; শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান; চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান; কর্মস্থল ও পরিবহন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান; কৃষি ও শিল্পের প্রসারে বিজ্ঞান; বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকসমূহ; উপসংহার।) 

ভূমিকা: মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশমান ইতিহাসে বিজ্ঞানের সীমাহীন ও রহস্যময় বিভিন্ন উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের উদাহরণ অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের আবিষ্কার ক্রমাগত দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান মানুষের জীবনে এনেছে গতিময়তা, সমস্ত পৃথিবীকে এনেছে মানুষের হাতের মুঠোয়, মানুষের জীবন যাত্রাকে করেছে সহজ। বিজ্ঞান সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করেছে। আধুনিক বিজ্ঞান শুধু শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়তই বিজ্ঞানের ব্যবহার করে চলেছি। 

বিজ্ঞানের অবদানসমূহ: বিজ্ঞান মানুষের সনাতন ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের জীবনকে উন্নীত করেছে এক নতুন উচ্চতায়। সভ্যতার উষা-লগ্নের সেই নিরীহ মানুষ আজ বিশেষ জ্ঞান ও অদ্যম শক্তির অধিকারী। বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে জেম্স ওয়াট স্টিম ইঞ্জিন ও জর্জ স্টিভেনস্ন রেলগাড়ি আবিষ্কার করেছেন। টমাস আলভা এডিসন টেলিভিশন আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞানের অভাবনীয় কৌশল আবিষ্কার মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দিয়েছে অনাবিল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। বিদ্যুৎ, আনবিক শক্তি, মহাকাশ গবেষণা, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর আবিষ্কার। বিজ্ঞান মানুষকে জল, স্থল, নভোম-ল জয় করার সুযোগ করে দিয়েছে। আর্কিমিডিস, কোপর্নিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন, আইনস্টাইন প্রমুখ মহান বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত শ্রমে মানুষ আধুনিক যুগে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান: আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রাকে জালের মতো আবৃত করে আছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের দান ছাড়া আমরা এক মুর্হূতেও চলতে পারি না। প্রতিদিন সকালে ধোঁয়া ওঠা চায়ের সাথে হাতে সংবাদপত্র না পেলে পুরো পৃথিবী থেকে আমরা নিজেদেরকে বিছিন্ন মনে করি। টেলিভিশনের পর্দায় আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার জীবন্ত ভিডিও চিত্র দেখতে পারি। টেলিফোনের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে মুহূর্তের মধ্যেই অন্য প্রান্তে যোগাযোগ করতে পারি। শিল্প বিপ্লবের পিছনে বিজ্ঞানের অশেষ অবদান রয়েছে। কৃষি কাজ, বাড়িঘর নির্মাণ, পরিধেয় বস্ত্র ও ঔষধপত্র তৈরি, খনিজ পর্দাথ উত্তোলন ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য। মোট কথা আমরা প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করে চলেছি। 

গৃহস্থলি কাজে বিজ্ঞান: বিজ্ঞানের সংস্পর্শে গৃহস্থলির কাজ সর্বদা সচল থাকে। দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনে বাড়ি-ঘরে মানুষ বিজ্ঞানের অবদানকে ব্যবহার করে চলেছে। রান্নার কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস, বৈদ্যুতিক হিটার প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া গবাদি পশুর বর্জ্য থেকে রান্নার কাজে ব্যবহার উপযোগী বায়োগ্যাস তৈরির প্রযুক্তি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিদ্যুৎ ছাড়া দৈনন্দিন জীবন প্রায় অচল। বৈদ্যুতিক পাখা, বিজলিবাতি চালানো; মোবাইল ফোন ও চার্জার লাইট চার্জ দেওয়া; টেলিভিশন, ওয়াটার হিটার, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, এয়ার কুলার প্রভৃতি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন। মোট কথা বিজ্ঞান মানব জীবনে আর্শীবাদ রূপে তাদের গৃহস্থলি কর্মকা-কে স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে। 

শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের ভূমিকা: শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের রয়েছে বিস্তর অবদান। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে প্রজেক্টরের সাহায্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ইন্টারনেটের আবিষ্কার শিক্ষা ক্ষেত্রে এনেছে সূদূর প্রসারী বিপ্লব। যেকোনো তথ্য বর্তমানে গুগল অনুসন্ধানের মাধ্যমে অতি সহজেই শিক্ষার্থীর হাতের নাগালে পৌছে যাচ্ছে। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় ও গবেষণামূলক কাজে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, নোটবুক, আইপ্যাড, ইন্টারনেট ব্রাউজিং প্রভৃতি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। এসব কিছুই মূলত বিজ্ঞানের অবদান। 

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান: মানুষকে সুস্থ করা ও জটিলরোগ উপশমে বিজ্ঞান চিকিৎসা বিজ্ঞান নিত্য নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দুরারোগ্য ব্যাধি এখন আর মানুষের জন্য ভয়ের কারণ নয়। আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে চশমা ব্যবহার ছাড়াই মানুষ আজ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাচ্ছে। স্ট্রেপটোমাইসিন, পেনিসিলিন, এক্সরে প্রভৃতি আজ মৃত্যু পথযাত্রীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। কর্নিয়া (অক্ষি গোলকের স্বচ্ছ আবরণ), বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, হৃৎপি-, ফুসফুস এবং যকৃতের মতো অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ সফল। 

কর্মস্থল ও পরিবহন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: অফিস, আদালত-প্রাঙ্গণ, কল-কারখানা, শপিংমল, দোকান-পাট প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান সৃষ্ট প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। প্রিন্টার ও ফটোস্ট্যাট মেশিন এসব প্রতিষ্ঠান সমূহের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তৈরি পোশাক শিল্প ও বিভিন্ন কল-কারখানায় শ্রমিকরা বৈদুত্যিক যন্ত্রের সাহায্যে তাদের দৈনন্দিন নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করছে। বড় বড় শপিংমলগুলোতে গ্রাহকদের নিরাপত্তা রক্ষা ও সুবিধার্থে সি.সি. ক্যামেরা, লিফট, এসকিউলেটার প্রভৃতি ব্যবহৃত হয় যা বিজ্ঞানের আবিষ্কার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকর্তৃক আবিষ্কৃত উড়োজাহাজ ও জলযান প্রধান মাধ্যম। এছাড়া স্থানিক দূরত্ব অতিক্রমে ও জনগণের কল্যাণে বাস, ট্রাক, মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার, লঞ্চ, স্টিমার প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়েছে। বেতার যন্ত্র, ভিডি ও চ্যাট, মোবাইল ফোন প্রভৃতির মাধ্যমে যোগাযোগের স্থানিক দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে। 

কৃষি ও শিল্পের প্রসারে বিজ্ঞান: বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অনুর্বর জমিতেও ফলায় সোনার ফসল; ঊষর মরু-প্রান্তরকে করে খাদ্যভা-ার। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং উনবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে। প্রাচীন আমলের কাঠের লাঙলের পরিবর্তন বর্তমানে কৃষকদের হাতে এসেছে কলের লাঙল, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি। সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ শক্তি চালিত পাম্প। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। কৃষিতে পচা আবর্জনা ও গোবরের সাথে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক রাসায়নিক সার। গবেষণার মাধ্যমে কৃষকদের হাতে উচ্চফলনশীল বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। অন্যদিকে মুদ্রণ শিল্পের বিপ্লবের ফলে কম্পিউটার ও সর্বাধুনিক মুদ্রণ যন্ত্রের সাহায্যে মাত্র দুই তিনজন কর্মী দিয়ে অল্প সময়ে লাখ লাখ পৃষ্ঠা ছাপানো সম্ভব হচ্ছে। প্রতিটি শিল্পকারখানা এখন বিজ্ঞানের উদ্ভাবিত বিভিন্ন যন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। বিজ্ঞান ছাড়া মূলত শিল্প বিপ্লবই সম্ভব ছিল না। 

বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকসমূহ: কল্যাণকর দিকের পাশাপাশি বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিকও কম নয়। বিজ্ঞান কর্তৃক আবিষ্কৃত স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলো যখন কাজ করতে শুরু করেছে তারপর থেকেই অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পরছে। দ্রুত শিল্পায়ন, যন্ত্রশিল্প কারখানা ইত্যাদি পৃথিবীর বায়ুম-লকে দূষিত করতে ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিনষ্ট করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা এ দূষণ প্রক্রিয়া অব্যহত থাকলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে যা জীবজগতের উপর বিভিন্ন ধরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- রাশিয়ার চেরনোবিলে পারমাণবিক দুর্ঘটনায় যে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়েছিল তা পবিশেকে মারাত্মকরূপে দূষিত করেছিল এবং এতে অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয় ও মারা যায়। বিজ্ঞানের কোনো কোনো বিষ্ময়কর আবিষ্কার মানুষের জন্য আর্শীবাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। 

উপসংহার: আধুনিক যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান মানুষকে করেছে স্বনির্ভরশীল এবং স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক ক্ষমতাধর। বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও অবদানসমূহকে মানুষ কোনো পথে ব্যয় করবে তা নির্ভর করে মানুষের ইচ্ছার উপর। যদিও বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে মহৎ উদ্দেশ্যে তথা মানব কল্যাণে। মানুষ যদি কেবল মানব কল্যাণে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে তবেই এর সার্থকতা প্রতিপন্ন হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা, গৃহস্থলি কাজকর্ম, কৃষি, শিল্প, আণবিক শক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের যে অবদান তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। বিজ্ঞান আমাদের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে বর্তমানে এমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যে বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক পা-ও এগুতে পারব না। তাই জয় হোক বিজ্ঞানের।




বিশ্ব পরিবেশ দিবস
(সংকেত: ভূমিকা; পরিবেশ দিবস; বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রয়াস; বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচী; পরিবেশ দিবসের উদ্দেশ্য; পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা; পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব; পরিবেশ দিবস ও বাংলাদেশ; বাংলাদেশে পরিবেশ দিবসের কর্মসূচী; উপসংহার।)

ভূমিকা: মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে মানুষ গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। আর মানুষের উপযোগী এই পরিবেশ ক্রমবিবর্তনের ফলে অর্জিত হয়েছে। কিন্তু আজ এই পরিবেশ বিভিন্ন সংকটের মুখোমুখি। এই সংকট বিশেষ কোনো গোষ্ঠী, দেশ বা জাতির নয়; সমগ্র মানবজাতির। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে পরিবেশ আজ বিপন্ন। আর তাই পরিবেশের নানা দুষণ ও সমস্যা দূর করে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসযোগ্য হিসাবে গড়ে তোলাই আমাদের কাম্য।

পরিবেশ দিবস: মানুষ তার নিজের চেষ্টা সাধনা দ্বারা নানা কিছু জয় করেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফলে আজ মানুষ গভীর সাগরতল থেকে মহাশূন্যে আধিপত্য বিস্তার করছে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে পরিবেশের সাথে। আর এই পরিবেশ নানা কারণে দূষিত হচ্ছে। এই দূষণ আমাদের কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে সচেতন হচ্ছে বিশ্বের মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ প্রতিবছর বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে এর প্রতিপাদ্য ঠিক করে থাকে। দিবসটির ২০১৪ সালের এর প্রতিপাদ্য ছিল- ''Raise your voice, not the sea level'' অর্থাৎ ‘হতে হবে সোচ্চার, সাগরের উচ্চতা বাড়াবো না আর।’

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রয়াস: ঊনিশ শতকের শেষের দিকে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও গবেষকরা পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই সূত্র ধরেই ১৯৯২ সালের ৩ জুন থেকে ১৪ জুন ব্রাজিলের রাজধানী রিওডি জেনেরোতে বিশ্ব পরিবেশ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় শিল্পোন্নত দেশসহ বিশ্বের ১৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা। এই সম্মেলনে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার বৈষম্য ভুলে গিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়। পরিবেশ দূষণে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর তুলনায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর ভূমিকা অনেক বেশি। তাই শিল্পোন্নত দেশগুলো পদক্ষেপ না নিলে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব না।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচী: বিশ্ব পরিবেশ দিবস আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত একটি দিবস। সারা বিশ্বের মানুষ এই দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে। এতে সমসাময়িক দুর্যোগ, দুষণের ভয়াবহতা নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এছাড়াও র‌্যালী, আলোচনা সভা, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, বৃক্ষরোপণ ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। চলতি বছরে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পরিবেশ দিবসে বিশেষভাবে আলোচনার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ আলোচনা সাপেক্ষে বছরব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণের কর্মসূচী গ্রহণ করে।

পরিবেশ দিবসের উদ্দেশ্য: পরিবেশকে বাঁচানোই পরিবেশ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। মানুষের বসবাস উপযোগী বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে চাই দূষণমুক্ত পরিবেশ। তাই বিভিন্ন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। নিম্নে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরা হলো-

- সকল দেশের জাতীয় পরিবেশ নীতির সফল বাস্তবায়ন করা।

- বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

- অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা।

- বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণে গুরুত্বারোপ করা।

- কৃষি কাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমানো।

- শিল্পবর্জ্য যথাযথভাবে পরিশোধন নিশ্চিতকরণ।

- উপকূলীয় বনায়ন সম্প্রসারিত করা।

- প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

- পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে প্রচার ও সম্প্রসারণ।

- সর্বোপরি পরিবেশ সম্পর্কে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।

পরিবেশ দূষণে ভয়াবহতা: আজ পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষণের ভয়াবহতার শিকার হচ্ছে। পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদানেরই নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা আছে। আর যখন দূষণ ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখনই ভারসাম্য হারায় পরিবেশ। নগরায়ন, শিল্পায়ন, বনভূমি উজাড়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া প্রভৃতি কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দূষণের ভয়াবহতার কবলে পড়ছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এই দূষণের কারণে পৃথিবী থেকে আজ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। বাতাসে প্রতিবছর ২০ কোটি টন কার্বন মনোঅক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বৃষ্টির পানিতে এসিডের পরিমাণ বাড়ছে। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ নতুন নতুন রোগের সৃষ্টির কারণ পরিবেশ দূষণ। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন পরিবেশের এই ভয়াবহ দূষণে পৃথিবী পৃষ্ঠের বহু জায়গা বন্যায় প্লাবিত হবে ও তুষারপাতে জমাট বেঁধে যাবে।

পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব: শুধু সভা-সমাবেশ, বক্তৃতা বা আলোচনাই পরিবেশ দিবসের লক্ষ্য নয়। প্রয়োজন দিনটির গুরুত্ব উপলব্ধি করা। বিশ্বের প্রতিটি দেশ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ায় ব্রত হয়। মানুষ পরিবেশের ভয়ানক চিত্র সম্পর্কে জানতে পারে। এর ফলে পূর্ব ব্যবস্থা বা পরিকল্পনার মাধ্যমে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়তে আগ্রহী হয়। বিভিন্ন দেশে সরকার ও জনগণ পরিবেশ রক্ষার কাজে হাত লাগিয়েছে। পরিবেশ দিবস উদযাপনের আহ্বান মূলত বিশ্ববাসীকে দূষণবিরোধী কাজে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান। তাই এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

পরিবেশ দিবস :পৃথিবীর পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুষণমুক্ত রাখতে অন্যান্য দেশের মতো ভারতও প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করে থাকে। বৈষ্ণিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত নগণ্য নয় । 

ভারত বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচী: বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সাথে একাত্ব হয়ে ভারত প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে থাকে। বর্তমানে পরিবেশ রক্ষার্থে জনগণের সক্রিয়তার কথা বলা হচ্ছে। দূষণের কুফল ও পরিবেশ রক্ষার সংবাদ নিয়ে জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রচার করছে। তাছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে ভারত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন: বন সংরক্ষণ, বনায়ন, বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ পরিচ্ছন্নকরণ ইত্যাদি।


উপসংহার: বর্তমানে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ মানুষ পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে চায়। তাই বিশ্বকে বসবাসযোগ্য করার লক্ষ্যে দূষণমুক্ত বিশ্ব গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।










বৃক্ষরোপণ  বৃক্ষসম্পদ উন্নয়ন



ভূমিকাপ্রকৃতি সব সময়ই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার সে পরিবেশকে রক্ষা করে থাকে ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে বৃক্ষরাজি অর্থাৎ তার বিস্তৃত বনাঞ্চল কিন্তু সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করতেগিয়ে এবং নিজেকে সভ্য করে তুলতে মানুষ অবাধে আঘাত হেনেছে প্রকৃতির রক্ষাকবচ এই বৃক্ষেরওপরে ফলে প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া দেখতেও আমরা বাধ্য হয়েছি এবং হচ্ছি একের পর এক আমাদেরপ্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যেখানে কোনো দেশের মোটআয়তনের অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন সেখানে বেশিরভাগ দেশই তা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেএর ফলে বৃক্ষহীনতায় পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে মরুভূমির সৃষ্টি হচ্ছে

বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তাবৃক্ষের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের অস্তিত্বের সম্পর্ক আমাদের জীবন জীবিকার জন্য বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য বৃক্ষ সমস্ত প্রাণীর খাদ্য যোগান দেয় বিশাল প্রাণীজগৎকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অক্সিজেন দেয় সেই সাথে প্রাণীজগৎকে বিপন্নকারী কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করে তার সুবিশাল শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে বৃক্ষ দগ্ধ পৃথিবীকে শীতল করে বন্যা,ক্ষরাঝড় নিয়ন্ত্রণ করে বৃক্ষ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে আবহাওয়া  জলবায়ুকে নাতিশীতোষ্ণরাখে মাটিকে উর্বর করে তোলে গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া রোধ করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলেবৃক্ষ আমাদের জীবনযাপনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমনআসবাবপত্রজ্বালানিকাঠ,গৃহনির্মাণরেল লাইনের স্লিপারনৌকালঞ্চবাঁধ ইত্যাদি নির্মাণে যে বিপুল পরিমাণ কাঠ প্রয়োজনহয় তা আসে এই বৃক্ষ থেকে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল যেমন রেয়নপেন্সিলকাগজের মন্ড,দেশলাইয়ের কাঠি  বাক্সকর্পূররাবার ইত্যাদি আমরা বৃক্ষ থেকে পাই জীবন রক্ষাকারী ভেষজবিভিন্ন ওষুধের মূল্যবান উপাদানও বৃক্ষই সরবরাহ করে

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি: জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের উন্নত  সুসভ্য দেশগুলোউন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বেশিমাত্রায় বনভূমি ধ্বংস করছে কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব বেশির ভাগক্ষেত্রেই পড়ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপরে উন্নত দেশগুলোর অধিক হারে বৃক্ষনিধনের ফলেবৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েউপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিপাওয়ায় বায়ুম-লের ওজনস্তরে ফাটল ধরেছে যার ফলে গ্রিন হাউজ ইফেক্টের মতো মারাত্মক সমস্যাসৃষ্টি হয়েছে  অবস্থার প্রতিকার এখনই করা না হলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে সারাবিশ্বে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ দ্বিগুন হয়ে যাবে এবং জীবনযাত্রা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে বিজ্ঞানীরা মনেকরেন

 বনভূমির অবস্থাবাংলাদেশে ভূখন্ডের মোট আয়তনের তুলনায় মাত্র ১৭.০৮ শতাংশবনভূমি রয়েছে আমাদের দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ .৫২ মিলিয়ন হেক্টর মোট বনানঞ্চলেরমাত্র ৪৫ শতাংশ এলাকায় গাছপালা রয়েছে আমাদের দেশজ উৎপাদনে বনজ সম্পদের অবদান.৬৬এবং কৃষিখাতে এর অবদান ১৩.২৪% উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে তিনধরণের বনভূমি আছে এগুলো হলো-
 ক্রান্তীয় চিরহরিৎ  পত্রপতনশীল বনভূমি: চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম  সিলেট অঞ্চলের বিস্তৃতএলাকা জুড়ে রয়েছে এই বনভূমি চাপালিসগর্জনগামারিজারুলকড়ই প্রভৃতি হলো  বনভূমিরপ্রধান বৃক্ষ

 শালবনময়মনসিংহগাজীপুর (ভাওয়ালের গড় টাঙ্গাইলের মধুপুরে  বনভূমি অবস্থিতএছাড়া রংপুর  দিনাজপুরেও সামান্য পরিমাণে বনভূমি রয়েছে  বনাঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ শাল,এছাড়া ছাতিমকড়ই  হিজলও আছে

 স্রোতজ বনভূমিবাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা খুলনাবাগেরহাটসাতক্ষীরা  কক্সবাজারজেলায় এই বনভূমি অবস্থিত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন পৃথিবীর সর্ববৃহৎস্রোতজ বাম্যানগ্রোভ বন এই বনাঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ হলো সুন্দরী

বৃক্ষরোপণ কেন প্রয়োজন: সভ্যতাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং শিল্পের উন্নয়ন  প্রসারের লক্ষ্যেপ্রতিনিয়তই আমরা বনাঞ্চল ধ্বংস করছি আর এর সবই করছি বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণেরলক্ষ্যে নিজেদেরকে উন্নত দেশগুলোর কাতারে নেয়ার চেষ্টায় উন্নয়নশীল দেশগুলো অবিরাম ছুটেচলেছে অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো চেষ্টা করছে নিজেদেরকে আরও উন্নত করতে আর এসব করতেগিয়ে সমস্ত চাপ এসে পড়ছে প্রকৃতির উপর বিশেষ করে বনভূমির ওপর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নিত্যনতুনসমস্যা আর এই সকল সমস্যা প্রতিরোধের জন্য আমাদেরকে বনায়নের জন্য কাজ করতে হবে যেসমস্ত সমস্যা মোকাবেলায় আমাদেরকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে তা হলো-

 প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ: ২০০৭ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আমেরিকান রাজনীতিবিদ ‘আলগোর’ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে দায়ী করেন এবং এর পেছনের কারণহিসেবে তিনি অধিক জনসংখ্যা এবং তাদের চাহিদাপূরণের লক্ষ্যে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন এর কথাবলেন বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেই আমরা স্বল্প বিরতিতে বিভিন্ন ঝড়ক্ষরানদী ভাঙনবন্যারসম্মুখীন হচ্ছি আমাদের দেশে উপকূলীয় দুর্যোগ রক্ষা করে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তাই প্রাকৃতিকদুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য আমাদেরকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে

 বায়ুদূষণ রোধ: বৃক্ষ পরিবেশ থেকে ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেনসরবরাহ করে কিন্তু অধিক হারে বৃক্ষনিধনের ফলে দিন দিন বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডেরপরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বৃক্ষহীনতার ফলে বায়ু দূষণের জন্য দায়ী অন্যান্য যে সকল উৎসগুলো আছেসেগুলোকেও পরিবেশ নিজ ক্ষমতায় পরিশোধন করতে পারছে না ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বায়ু দূষণ এবং এইকারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগে তাই এই বায়ুদূষণ এবং তার থেকে সৃষ্টরোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বনায়ন করতে হবে

 গ্রিন হাউজ ইফেক্ট প্রতিরোধ: বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রিন হাউজ ইফেক্টের ফলে নিকটভবিষ্যতে আর্কটিক মহাসাগরের বিশাল বরফ স্তর গলে সমুদ্রের পানির স্তর বেড়ে যাবে আর তা যদি মিটারও বাড়ে তাহলে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশবিশেষ করে মালদ্বীপ  বাংলাদেশের মতোদেশগুলো ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাবে আর তাই এর থেকে নিস্তার পেতে হলে আমাদেরকেঅধিক হারে বনায়ন করতে হবে

 ভূমি ক্ষয়রোধবনভূমি ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষরা  মরুকরণ দেখা দেয়তাই ভূমিক্ষয় রোধের জন্য বৃক্ষরোপণ করা খুবই প্রয়োজন

বৃক্ষরোপণ অভিযানরবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- ‘দাও ফিরিয়ে সেই অরণ্যলও  নগর অর্থাৎ তারসময়েই তিনি বনভূমির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন অনেক সময় পেরিয়ে গেছেতবেবর্তমানে আমাদের সরকারগুলোও বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে আর তা সবাইকে অনুধাবনকরাতে সরকার বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে দেশকেবাঁচাতে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহকে বেছে নেয়া হয়েছে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ হিসেবে মৌসুমী বৃষ্টিপাতহওয়ায় এই সময়কে বৃক্ষরোপণের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সরকার নিজউদ্যোগে বিভিন্ন নার্সারি থেকে লক্ষ লক্ষ চারা গাছ জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যেবিতরণ করছে পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থাও এই অভিযানে এগিয়ে এসেছে সরকার সামুদ্রিকজলোচ্ছ্বাস  ভূমিক্ষয় রোধে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে উপকূলবাসীকে সম্পৃক্ত করার জন্যবিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে

বনভূমি উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ: বনজ সম্পদ উন্নয়ন  তার সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য সরকারবাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তুলেছে গঠন করেছে বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সংরক্ষিতবনাঞ্চল থেকে বেসরকারিভাবে কাঠ  অন্যান্য দ্রব্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে বনভূমি সম্প্রসারণেরজন্য বনের আশেপাশের জমি সরকারি দখলে নেয়া হয়েছে এবং সেখানে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছেসরকারের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে সারাদেশে ৫২,০০০ একর জমিতে এবং সমুদ্র উপকূলে৪০,০০০ একর জমিতে বনভূমি সৃষ্টি করা হয়েছে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে ১৩,০০০ একরজমিতে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা হয়েছে আর প্রায় ১৫,০০০ একর জমিতে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করারজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে

বনভূমি উন্নয়নে করণীয়দেশের অর্থনৈতিক  অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য বনভূমি  বনজসম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমির পরিমাণ অত্যন্তকম অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে আমাদের বনভূমি সংকুচিত হয়ে এসেছে কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক অন্যান্য প্রয়োজনে এই বনভূমি  বনজসম্পদের সংরক্ষণ  সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন আর  জন্যযা করণীয়-

নতুন বনভূমি গড়ে তুলতে হবে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলউপত্যকাপাহাড়ি উচ্চ এলাকা  সমুদ্রউপকূলে পর্যাপ্ত বনায়ন করতে হবে

নির্বিচারে বৃক্ষনিধন রোধ করতে হবে মূল্যবান বৃক্ষসমূহ সরকারি অনুমতি ছাড়া নিধন করানিষিদ্ধ করতে হবে

সরকারি তত্ত্বাবধানে বনাঞ্চল সংরক্ষণ  বৃক্ষরোপণ করতে হবে বনজ সম্পদ রক্ষায়  এরউন্নয়নের জন্য বনবিভাগের কর্মকর্তাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দিতে হবে বনবিভাগীয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরদুর্নীতি দমন করতে হবে

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অভয়ারণ্য গঠন  সংরক্ষণ করতে হবে জনগণকে সচেতন হতে হবেবিনামূল্যে জনগণের মাঝে চারাগাছ বিতরণ করতে হবে

বনভূমি থেকে কাঠ সংগ্রহের জন্য যেন আর কোনো গাছ কাটা না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে কাটাহলেও সেখানে নতুন গাছ লাগিয়ে যেন সেই শূন্যতা পূরণ করা হয় জ্বালানি হিসেবে কাঠের বিকল্পখুঁজতে হবে


বৃক্ষরোপণ অভিযানকে শুধুমাত্র একটি সপ্তাহে সীমাবদ্ধ না রেখে বছরের অন্যান্য সময়ে তা চালিয়েযেতে হবে

চোরাইপথে বৃক্ষনিধন প্রতিরোধ করতে হবে এজন্য সরকার এবং জনগণকে সচেষ্ট হতে হবে

উপসংহারবৃক্ষহীন একটি পৃথিবীতে আমরা কখনই বেঁচে থাকতে পারব না আমাদের নিজেদেরঅস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই বনায়নের ওপর অর্থাৎ বৃক্ষরোপণের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে রাষ্ট্রীয়অর্থনৈতিক উন্নয়নব্যক্তিগত পারিবারিক উন্নয়ন এবং জীবন  জীবিকার তাগিদে আমাদেরকেবনভূমির সংরক্ষণ  উন্নয়ন করতে হবে শুধুমাত্র সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়েই নয় বরংব্যক্তিগতভাবেও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে এবং সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে




বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


ভূমিকাবাংলাদেশ তথা বাঙালির কাছে রবীন্দ্রনাথ একটি বিশেষ নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁরসময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় সমান প্রতাপের সাথে বাংলা সাহিত্যভাষা  সংস্কৃতিতেসমাসীন রয়েছেন তাঁর সর্বতোমুখী প্রতিভাজ্ঞানের গভীরতা তাকে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিতকরেছে তিনি এসেছিলেন ক্ষণকালের জন্য কিন্তু হয়ে রয়েছেন সর্বকালের ভারতীয় হয়েও তিনিবিশ্বের দরবারে আসন গেড়ে নিয়েছেন নিজের মর্যাদা  যোগ্যতা বলে ‘বিশ্বকবি’ অভিধায়অভিসিক্ত হয়ে তিনি আছেন সকল মানুষের হৃদয়জুড়ে

জন্ম: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোর সম্ভ্রান্ত ঠাকুর পরিবারে  মে ১৮৬১ (২৫বৈশাখ১২৬৮সালে তাঁর পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর  মাতা সারদা দেবী পিতা-মাতার ১৫ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্দশতম এবং অষ্টম পুত্র।  মৃত্যু  1941  7AUGUST 

শৈশব কৈশোর  শিক্ষাজীবন: শিশু রবীন্দ্রনাথ বেড়ে উঠেছেন নিতান্তই সহজ সরল সাদাসিদেভাবে একটু বড় হলেই প্রথমে ভর্তি হলেন কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতেকিছুদিনপর চলে গেলেন নর্মাল স্কুলে তারপর বেঙ্গল একাডেমিসেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে কিন্তু কোথাও তাঁর মনবসেনি ঠাকুরবাড়ির রুটিন বাঁধা জীবনে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছিলেন অভিভাবকদের নিরালস প্রচেষ্টাসত্ত্বেও তিনি স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেননি স্থির করলেন মেজভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেবিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টার হবেন লন্ডনে গিয়ে প্রথমে পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং পরেবিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হন কিন্তু পড়াশুনায় মন না থাকায় তাঁর বেশির ভাগ সময় কাটে সাহিত্যচর্চায় দেড় বছর পর ১৯ বছর বয়সে পিতার নির্দেশে শিক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে দেশে ফিরে আসেনএখানেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে

সাহিত্যকর্ম  সাহিত্য ভাবনা: তাঁর লেখালেখির হাতে খড়ি হয় আট বছর বয়সে ১৩ বছরবয়সে ‘অমৃতবাজার’ নামে দ্বিভাষিক পত্রিকায় (১৮৭৪) ‘হিন্দুমেলার উপহার’ নামে কবিতাটিপ্রকাশিত হয় বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো ক্ষেত্র নেইযেখানে তাঁর স্বচ্ছন্দ পদচারণা নেই কবিতা,গাননাটকউপন্যাসপ্রবন্ধছোটগল্পপ্রভৃতি অবিরাম তিনি লিখে গেছেন কিন্তু মূলত তিনি কবিএবং কবি হিসেবেই তাঁর খ্যাতি সমধিককবির মন নতুন সৃষ্টির উন্মাদনায় ব্যাকুল

তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যমানসীসোনার তরীচৈতালীগীতাঞ্জলিবলাকাপুনশ্চ প্রভৃতি;উপন্যাস-চোখের বালিঘরে-বাইরেযোগাযোগচতুরঙ্গ প্রভৃতিনাটকবিসর্জনরক্তকরবী প্রভৃতি;ছোটগল্পগ্রন্থগল্পগুচ্ছএছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম লিখে গেছেন
  
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অনুভব করা তথা জীবন  জগতকে উপলব্ধি করার জন্য যে দূরত্ব অতিক্রমকরা প্রয়োজনতাঁর প্রিয়জনের মৃত্যু এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে যারবহিঃপ্রকাশ ‘কড়ি  কোমল’  পাওয়া যায়-

মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে

মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই

কড়ি  কোমলে’  কবি আত্ম-প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি কিন্তু মানসীতে পেরেছেন তাইকবি বলেছেন-

মানসীতে যাকে খাড়া করেছি যে মানসেই আছে,

সে আর্টিস্টের হাতে রচিত ঈশ্বরের প্রথম অসম্পূর্ণ প্রতিমা

বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ববঙ্গ  উত্তরবঙ্গে তাদের বিস্তৃত জমিদারী ছিল এই জমিদারীর ভার নিয়েরবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং বাংলার গ্রাম-গঞ্জনদীপথ ঘুরে তিনি যে রোমাঞ্চকরঅভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন তা তাঁর রচিত পরবর্তী সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে যারপ্রমাণ ‘ভানু সিংহের পত্রাবলীতে পাওয়া যায়- ‘আমি জীবনের কতকাল যে এই নদীর বাণী থেকেইবাণী পেয়েছি মনে হয় সে যেন আমি আমার আগামী জন্মেও ভুলব না

রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে গানের প্রসঙ্গ আসবেইতাঁর কবিতা আসলে গানেরই অনুজসহোদরা বিভিন্ন সময়ে লেখা বিভিন্ন কবিতার সমন্বয়ে তাঁর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এছাড়াওতিনি যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনায় যেমনহিতবাদীসাধনাবিচিত্রা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠাকালথেকেই তিনি ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ এর সাথেও যুক্ত ছিলেন বলা চলেতিনিই বাংলার ভাষায়প্রথম সার্থক ছোটগল্প লিখেছেন তাঁর গদ্যে তিনি প্রাচ্য  পাশ্চাত্যের সমন্বয় ঘটিয়েছেন তিনি কেবলবিশ্বমানের ছোটগল্প লিখেছেনতাই- নয়বিশ্বকে ছোটগল্পের নতুন পথও দেখিয়েছেনতাই এখানেউদ্ধৃতিযোগ্য-

নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা

নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ

অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে

শেষ হয়েও হইল না শেষ

শুধু কবিতা আর গানই নয় পাশাপাশি লিখেছেন একের পর এক কাব্যনাটকহাস্যরসাত্মক রচনাএগুলোর পাশাপাশি প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর উপন্যাস রবীন্দ্রনাথ বিশ্বমানের একজন চিত্রশিল্পীওছিলেন জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি দুই হাজারের বেশি ছবি এঁকেছেন

বিবাহ  দাম্পত্য জীবনরবীন্দ্রনাথের বিবাহ হয় ১৮৮৩ সালের  ডিসেম্বর বিয়ের আগে তারস্ত্রীর নাম ছিল ‘ভবতারিনী’ পরে শ্বশুরবাড়িতে তার নাম বদলে রাখা হয় ‘মৃনালিনী দেবী তিনিশিলাইদহে সপরিবারে বহুদিন ছিলেন পরবর্তীতে কলকাতায় আসার পথে স্ত্রী মৃনালিনী দেবী অসুস্থহয়ে পড়েন এবং অল্পদিনের মধ্যেই মারা যান রবীন্দ্রনাথের তিন কন্যা  দুই পুত্র ছিল

রাজনীতি  সমাজকল্যাণ: ১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রনাথসক্রিয়ভাবে রাজনীতি  সমাজকল্যাণমূলক কাজে জড়িত ছিলেন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের কারণেতিনি বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতাসভা-সমাবেশে যোগদান করতেন  সময়ে তাঁর রচিত গান বর্তমানেবাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বিবেচিত-

আমার সোনার বাংলাআমি তোমায় ভালোবাসি,

চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি

এছাড়াও তিনি শিলাইদহে অবস্থানকালে কৃষক  শ্রমজীবীদের জন্য কাজ করেছেন ১৯১৭ সালেভারতে ব্রিটিশ দমননীতির বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেনজালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডেরপ্রতিবাদে ‘নাইট’ উপাধি বর্জন করেন তাছাড়াও হিন্দু-মুসলিম সংকটভারতীয় রাজনীতি সমাজনীতিবিশ্ব পরিস্থিতি প্রভৃতি নিয়ে তিনি অসংখ্য লেখা লিখেন

সমাজগঠনমূলক প্রতিষ্ঠান: সাহিত্য রচনার পাশাপাশি তিনি সমাজ গঠনমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপগ্রহণ করেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শান্তিনিকেতনে ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ নামে একটি আবাসিক বিদ্যালয়স্থাপন পরবর্তীকালে এটিই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপলাভ করে

পুরষ্কার  সম্মাননাতিনি তাঁর বহুকৌণিক কাজের পাশাপাশি অর্জন করেছেন অসংখ্য পুরস্কারআর সম্মান-সম্মাননা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ১৯১৩ সালে ডিলিট উপাধি দেয় ১৯৩৬সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এই উপাধিতে ভূষিত করে ১৯১৩ সালে তিনি এশিয়ার প্রথম ব্যক্তিহিসেবে নোবেল পুরস্কার পান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি দেয় ১৯৪০ সালে


উপসংহার: রবীন্দ্রনাথ তাঁর দীর্ঘ আঁশি বছরের জীবনে যেমন সাহিত্য রচনা করেছেন তেমনি মর্যাদাএবং সাফল্যও পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যিকার অর্থেই প্রতিভাবান তিনি তার জীবনের শেষসময়ে এসেও কবিতা লেখা ছাড়েননি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালের  আগস্ট (১৩৪৮ সালের ২২শ্রাবণমারা যান রবীন্দ্রনাথের মতো মহাপ্রতিভা সমগ্র বিশ্বেই বিরল তিনি এক অর্থে মহাসাধক,মহামানব তিনি ছিলেন সত্য-সুন্দরের কবি সুন্দরের আরাধনায় তিনি মানবতাকে বিসর্জন দেননি,মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেননি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সব্যসাচী রবীন্দ্রনাথ আমাদের সকলেরই প্রিয়কবি